কেমন ছিল ১৭৫৭ সালের কলকাতা শহর? জানুন বর্তমানের সঙ্গে পার্থক্য

23
কেমন ছিল ১৭৫৭ সালের কলকাতা শহর? জানুন বর্তমানের সঙ্গে পার্থক্য

অনেক সময় আমাদের বয়স্করা বলে থাকেন, তোমরা টাকার মূল্য কি বুঝবে? আমাদের সময়ে এক টাকায় কত কিছু করা যেত, তেমনই ওই মূল্যের অর্থ রোজগার করতে তেমনি কষ্ট পেতে হতো। আজ যেমন প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে, তেমনি কিন্তু সাথে সাথে বেড়েছে প্রত্যেক মানুষের কাজের দাম। আজ বহু বছর আগেকার কলকাতা নিয়ে একটু আলোচনা করা হোক। ১৭৫৭ সালে কলকাতা শহর ছিল একেবারেই অন্যরকম। তখনকার বাজারদর শুনলে এখনকার মানুষদের রীতিমতো হাসি পাবে। তখন মুঠো করে টাকা নিয়ে যেতেন, ব্যাগে করে বাজার নিয়ে আসতেন।

আর এখন ব্যাগে করে টাকা নিয়ে গিয়ে মুঠো করে বাজার নিয়ে আসতে হয়।সে যাই হোক, পলাশীর যুদ্ধের পাঁচ বছর আগের ইংরেজ সরকার একবার এক জমিদারের কাছে একবার কৈফিয়ৎ চেয়েছিলেন, কেন দেশে সরিষার দাম এত বেড়ে যায়। তার উত্তরে জমিদার সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠান যাতে তখনকার সময়ের একটি বাজারদরের একটি ধারণা পাওয়া যায়। ১ টাকায় প্রায় ৬০ কেজি চাল পাওয়া যেত, গম পাওয়া যেত ১ টাকায় প্রায় ৬০ কেজি। ময়দা পাওয়া যেত ১ টাকায় ৪০ কেজি।এরপর জিনিসের দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এই বাজারদরে ও তখনকার সময়ে দুর্ভিক্ষের জন্য হাহাকার পড়ে গেছিল মানুষের মধ্যে।পলাশীর যুদ্ধের পর জিনিসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছিল।

তখনকার দিনে মানুষদের মাসিক মাইনেও ছিল কম। খানসামা, লাঠিয়াল, প্রধান বাবুর্চি, কোচ ম্যান এদের সকলের মাইনে ছিল পাঁচ টাকা। জমাদার, খিদমতগার, পাচক এর প্রধান সহকারী, পালকি বাহক এর মাইনে ছিল তিন টাকা। ধোপার মাইনে ছিল দুই টাকা। মশালচি, অর্থাৎ যারা মশাল জ্বালিয়ে প্রত্যেককে রাস্তা দেখাতেন তাদের নাইনে ছিল দুই টাকা। এছাড়াও নাপিত,দাসি এদের সকলের মাইনে ছিল প্রায় দুই থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে। মোটকথা তখনকার বড় মানুষেরা খুবই আরাম প্রিয় মানুষ ছিলেন। জমিদার ঘরে একজন মানুষের জন্য দাস-দাসী থাকতো প্রায় ১০ থেকে ১২ জন।

দাস-দাসী ছাড়াও তখনকার সময়ে ক্রীতদাস কেনাবেচা করা হতো। যে সমস্ত ক্রীতদাস খানসামা অর্থাৎ রান্নাবান্নার কাজ জানত, সেই সমস্ত ক্রীতদাসকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। কোন ক্রীতদাস নাচ জানার জন্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হত। শুধুমাত্র নিগ্রোরা ক্রীতদাস হিসাবে পরিচিতি পেতেন না, এই দেশের বহু গরীব মানুষেরা ক্রীতদাস হিসাবে পরিচিতি পেতেন। ছোটবেলায় বাবা মাকে হারানোর বহু ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে দাসে পরিণত হয়েছিল। তখনকার সময় ইটের দাম ছিল প্রচুর কম। তখন ইট আনা হত ৩ টাকা ১০ আনা দরে, চুন আনা হতো ৩৯ টাকা দরে।

তখন দূরবর্তী স্থানে যাতায়াত করার একমাত্র ব্যবস্থা ছিল পালকি। সাধারণ মানুষেরা হেঁটে চলাচল করলেও বড় বড় জমিদাররা পালকিতে চেপেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতেন। তবে এখন যেমন আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অনেক কম মূল্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাই, তখন কিন্তু পালকিতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় লাগবে অনেক, আজকের তুলনায় পালকির ভাড়া কিন্তু ছিল অনেকটাই বেশি।