রান্নাঘরের অত্যন্ত মহামূল্যবান একটি উপকরণ হল লবণ। একটু লবণের অভাবে সব তরিতরকারি কেমন যেন বিস্বাদ লাগে। যত ভালো উপকরণ দিয়েই রান্না করা হোক না কেন লবণ ছাড়া কোনোকিছুর কোনো ভূমিকা নেই। তবে জানেন কি এই উপাদান কোথা থেকে তৈরী হয়। হ্যাঁ জানি, বলবেন যে সমুদ্রের জল থেকে তৈরী হয় লবণ। তবে আসল বানানোর পদ্ধতি কজনই বা জানেন! চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক লবণ বানানোর পদ্ধতি।
পদ্ধতিঃ খাবারের অন্যতম উপকরণ ছাড়াও ড্রাইং, কাপড় তৈরি, চামড়া শিল্প ইত্যাদিতে লবণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লবণ চাষি কথাটি হয়তো এর আগে আপনারা শুনে থাকবেন। লবণ চাষি বলা হয় তাদেরকে যারা লবণ চাষ করেন। লবণ রিফাইনারি ফ্যাক্টরিগুলি মূলত সমুদ্রের ধারে ফাঁকা মাঠে থাকে। প্রথমে সমতল জমির চারপাশ কেটে মাটির আল দিয়ে ঘিরে উঁচু বেড়ার মত কয়েকটি ছোট ছোট প্লট আকারে ভাগ করে নেওয়া হয়। সেই জমির উপর পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে নদী বা সমুদ্র থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে নোনা জল তুলে সেই প্লট গুলিকে ভরা হয়। এইভাবে টানা রোদে ৬ থেকে ৮ দিন জল রেখে দিলে প্রখর রোদে ধীরে ধীরে জল বাষ্পীভূত হয়ে ওই পলিথিনের উপর লবণ থিতিয়ে পড়তে শুরু করে। জল বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ায় লবণ জমতে শুরু করে ওই পলিথিনের উপরেই। লবণ চাষিরা যখন একটি বড় তক্তা কাঠের সাহায্যে সেই লবণ একত্রিত করে তখন সেই পদ্ধতি অত্যন্ত অপরিষ্কার। এইভাবে খালি পায়ে, খোলা আকাশের নিচে লবণ চাষিদের এমনভাবে লবণ তৈরি করতে দেখে মনে হবে যে এটি খেলে পেটের গন্ডগোল থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে বাজারে এসেছে নামি দামি নানান ব্র্যান্ডেড কোম্পানির লবণ। সেই সমস্ত লবণের দামও ভিন্ন।
জমি থেকে এই লবণ সংগ্রহ করারে পর তা নিয়ে যাওয়া হয় ফ্যাক্টরিতে। বাজার থেকে কেনা প্যাকেট লবণ অত্যন্ত মিহি হলেও জমি থেকে পাওয়া লবণগুলি বড় বড় দলা আকারে থাকে। আগেকার সনাতনপদ্ধতিতে লবণ চাষের সময় সরাসরি জল শুকিয়ে মাটি থেকে লবণ পাওয়া যেত। সেই লবণের রং হত কালো। তাতে লেগে থাকত মাটি আর ময়লা। সেই পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ছিল। এখনকার স্বচ্ছ লবণের ক্ষেত্রে প্রথমে জমি থেকে ওই দলা পাকানো লবণ ফ্যাক্টরিতে যায়। সেই মোটা মোটা লবণ মেশিনের সাহায্যে ভালোভাবে পিষে নেওয়ার পর পরিষ্কার করার জন্য জল ও লবণ একত্রে মিশিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। তখন আর সেখানে কোনো নোংরা আবর্জনা লেগে থাকে না। আরও একবার মেশিনের সাহায্যে লবণ থেকে জল আলাদা করে নিয়ে তাতে মেশানো হয় আয়োডিন। এতগুলি ধাপের পর ভিজে লবণ মেশিনের সাহায্যে ভালোভাবে শুকিয়ে ঝুরঝুরে করা হয়। তারপর সেই মিহি লবণ কোম্পানির বিভিন্ন রকম প্যাকেটিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট প্যাকিং মেশিনে চলে যায়।