অনেক পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক কিছুই জানা যায়। যেমন আমরা সত্তরের দশকের অভিনেতা অভিনেত্রীদের বলতে যাদের বুঝি কেমন শশী কাপুর, রাজেশ খান্না, এদিকে শর্মিলা ঠাকুর আরো অনেকেই তবে সেই সময়ে আরো এক বলি সুন্দরী ছিলেন যিনি সাহসী পোশাকে সেই সময়ই সকলকে মাত দিতে পারতেন। দেখতেও ছিলেন খুব সুন্দরী। যার কথা বলতে যাচ্ছি তিনি হলেন সিমি গারেওয়াল। এনি একজন অভিনেত্রী হলেও সিমি অধিক পরিচিত ছিলেন ‘দ্য লেডি ইন হোয়াইট’ নামে। কারণ সাদা রঙের পোশাকেই বেশি দেখা যেত বলে তাঁর এমন নাম।
তাঁকে সঞ্চালক হিসাবে টক শোয়ে বলিপাড়ার বিভিন্ন তারকার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। সেই সব তারকাদের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক কথাই জানা গেছে তার শো থেকে। কিন্তু তাঁর জীবনেও পুরুষের আনাগোনা কম ছিল না। ভারতের উপরের সারিতে থাকা শিল্পপতি থেকে ক্রিকেটার— সকলের সঙ্গেই নাম জড়িয়েছিল সিমির।
সিমির জীবনের ১৭ বছর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েন সিমি। গুজরাতের জামনগরের মহারাজার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, সিমি যখন ইংল্যান্ডে থাকতেন, তখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন এই মহারাজা। সেই সূত্রেই প্রথম আলাপ দু’জনের। সেই আলাপই প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তাঁদের সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।
এরপর তার মন টাটা কোম্পানির মালিক রতন টাটার উপর গিয়ে পড়ে। একটা সময়ে জনসমক্ষে রতনকে নিয়ে প্রশংসাও করতেন অভিনেত্রী। রতন ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন, তা-ও বলতে শোনা যায় সিমির মুখে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, বিদেশে থাকার সময় রতনকে যেমন চিন্তামুক্ত দেখায়, দেশে ফিরলে সে রকম থাকেন না তিনি। তিনি আরো বলেন রতন টাটার সম্পর্কে যে, ‘‘আমি আর রতন একসঙ্গে অনেকটা পথ হেঁটেছি। পুরুষ মানুষ হিসাবে ও নিখুঁত। ওর বোধও দুর্দান্ত। এত ভদ্র মানুষ খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। অর্থ ওকে কোনও দিনও চালনা করেনি।’’
কিন্তু এই রতন টাটার সাথেও তার সম্পর্ক বিশেষ স্থায়ী হয়নি। কারণ শেষ অবদি ১৯৭০ সালে রবি মোহনকে বিয়ে করেন ‘মেরা নাম জোকার-’এর অভিনেত্রী। বিয়ের আগে তিন মাস ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’-এ থাকার পর ২৭ বছর বয়সে রবির সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক যে বেশি দিন টিকবে না, তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন সিমি। তাও বিয়ের ৯ বছর রবির সাথে সংসার করার পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এক সাক্ষাৎকারে সিমিকে তার স্বামীর ব্যাপারে বলতে শোনা যায়, ‘‘দিল্লির এক অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন রবি। ওর সঙ্গে আমার চিন্তাধারার কোনও মিল ছিল না। বিয়ের পর মহিলারা বাড়ির বাইরে গিয়ে চাকরি করবেন, তা মেনে নিতে পারতেন না রবি।’’
এরপর সে ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পটৌডির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সিমি। দীর্ঘ দিন মনসুরের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের দু’জনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে চলে আসেন শর্মিলা ঠাকুর।
আমরা সকলেই জানি শর্মিলা ঠাকুর পাতৌদি পরিবারের বধূ। কিন্তু তার স্বামীরও এক গার্লফ্রেন্ড ছিল এই খবর সেভাবে পাওয়া যায়নি। এখন জানা যাচ্ছে এই সিমি ছিল তার বান্ধবী। কিন্তু এও জানা গেছে যে, শর্মিলার সঙ্গে মনসুরের পরিচয়ের পর সিমির কাছ থেকে মন সরে যেতে থাকে খেলোয়াড়ের। শর্মিলা ঠাকুরকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন মনসুর। সিমির সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার পর শর্মিলার সঙ্গে সম্পর্কে আসেন মনসুর। পরে শর্মিলা এবং মনসুর গাঁটছড়া বাঁধেন।
তাঁর জীবনে কোনো সম্পর্কই লাস্ট করেনি। তবে তার কেরিয়ার জীবন কিন্তু দারুন ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৭ অক্টোবর দিল্লিতে জন্ম সিমির। বলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক যশ চোপড়ার স্ত্রী পামেলার খুড়তুতো বোন হওয়ার সুবাদে অভিনয় জগৎটা ছোটো থেকেই তার কাছে পরিচিত ছিল। ইন্ডিয়ান হলেও তার শৈশব কেটেছে ইংল্যান্ডে। সেখানকার নিউল্যান্ড হাউস স্কুলে পড়াশোনাও করেছেন। শৈশবের বেশির ভাগ সময় ইংল্যান্ডে থাকার পর ভারতে ফিরে আসেন তিনি। বিদেশি কালচারে বড়ো হওয়ার জন্যই ছোটো থেকেই ইংরেজি ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন বলে ১৯৬২ সালে তাঁকে ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৫ বছর বয়সে ফিল্ম জগতে পা রাখেন তিনি। ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘টারজান গোস টু ইন্ডিয়া’ ছবিতে ফেরোজ় খানের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় সিমিকে। তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান বলিপাড়ার ছবি নির্মাতারা। ১৫ বছর বয়সেই বিকিনি পোশাকে দেখা দিয়েছিল সিমিকে। এর পর আর সিমিকে কেরিয়ারে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর বলিউডে মেহবুব খান, রাজ কপূর, শম্মি কপূর, রাজেশ খন্না, হেমা মালিনী, বৈজয়ন্তীমালার মতো বলি তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সিমি। শুধু বলিউডে নয় বাংলা ছবিতেও সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং মৃণাল সেনের ‘পদাতিক’-এও কাজ করেন তিনি।
তার অভিনয় সকলেরই খুব ভালো লাগে। তবে ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখি এবং প্রযোজনার দিকে আগ্রহ তৈরি হতে থাকে সিমির। নিজস্ব একটি প্রযোজনা সংস্থাও খুলে ফেলেন তিনি। রাজ কপূর এবং রাজীব গান্ধীর উপর ডকুমেন্টারিও বানিয়েছেন তিনি।
এরপর বিভিন্ন টক শো তে সঞ্চালিকার জায়গায় তাঁকে দেখা গেছে। তার নিজেরও ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি তার অনুরাগীদের সাথে যুক্ত থাকেন বলেই জানা যায়।